জীবনের পুরোনো কাসুন্দি না ঘেঁটে বরং জীবনটাকে উপভোগ করুন। সুখ পাখির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। দুঃখ থাকবেই, ওগুলো তো আমাদের হাতে নেই; তা বলে শুধু এসব নিয়ে বসে থাকলেও চলবে না। ভালো থাকাটা আপনার নিজের হাতে। চাইলেই পারবেন, এটা ভুলবেন না। কীভাবে ভালো থাকতে পারেন তা’র কয়েকটা টিপস নিচে লেখা হলোঃ
- ভালো থাকার সব থেকে বড় ওষুধ হাসি। এটা ভুললেই মুশকিল। হাসলে এনডরফিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা আমাদের মেজাজ ভালো করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, হাসলে হৃদপিন্ডও ভালো থাকে। ক্যালোরিও পোড়াতে সাহায্য করে হাসি।
- বারবার মন খারাপ হওয়ার কারণ অনেকক্ষেত্রে শারীরিকও হতে পারে। দুর্বল স্বাস্থ্য, ঘ্যানঘেনে অসুখ-বিসুখ মনে প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, শরীরে পুষ্টির ঘাটতি হলে অবসাদ আসতে পারে। মস্তিষ্ক গঠনে ওমেগা-থ্রি নামক একটা ফ্যাটি এসিড সাহায্য করে। এর ঘাটতিও অবসাদ অনুভব করার কারণ হতে পারে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখুন। বিশেষতঃভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার, যা অবসাদ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- অনেক সময় দেখা যায় মন ভালো, ফুরফুরে মেজাজ; কিন্তু হঠাৎ অজ্ঞাত কারণে বিগড়ে গেলো। এমন মুড পরিবর্তনের কারণ অনেকক্ষেত্রে ভিটামিন ডি-এর অভাব হতে পারে। ভিটামিন ডি এর অন্যতম উৎস সূর্যরশ্মি। তাই সপ্তাহে অন্ততপক্ষে দু’দিন ১৫ মিনিট করে রোদে থাকুন। তবে কড়া রোদে থাকবেন না, এতে ভিটামিন ডি অপেক্ষা অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাব বেশী থাকে। সবচেয়ে ভালো ভোরের আলো, বা মধ্য দুপুরের আগে ও পরে। এছাড়া চর্বিযুক্ত মাছ অর্থাৎ বড় মাছ, মাশরুম ইত্যাদিতেও ভিটামিন ডি থাকে। আরো ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার জানতে ক্লিক করুন।
- শরীরচর্চা আপনার মন-মেজাজ ভালো করতে ভূমিকা রাখে। ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয় যা আপনাকে চিন্তা ভাবনা থেকে নিষ্কৃতি দেবে। শরীরচর্চার ফলে মস্তিষ্কে নিঃসৃত হওয়া এনডরফিন এবং অ্যানান্ডামাইড এ কাজটি করে। এছাড়াও ব্যায়ামে মনোনিবেশ হওয়ায় মাথায় অন্য কোনো চিন্তা তেমন আসেও না। তাই প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট সময় বের করুন শরীরচর্চার জন্য।
- মনোমুগ্ধকর সুগন্ধী খারাপ মন কে ভালো করতে পারে। এটি বহু পরীক্ষিত সত্য। বার্গামেট, জেরানিয়াম, নেরোলি, জেসমিন ইত্যাদি এসেন্সের মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালান ঘরে। এসব এসেন্সের রুম ফ্রেশনারও ব্যবহার করতে পারেন ঘরে। গোসলের পানিতেও সুগন্ধী মেশাতে পারেন।
- হঠাৎ করে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে পারেন। পড়ুয়ারা বিদেশে কিছুর জন্য আবেদন করতে পারেন। এসব চলার সময় বেশ কিছুদিন উত্তেজনার পারদ থাকবে তুঙ্গে। তাই ভুলেই যাবেন মন খারাপের গল্প।
- মন খারাপের পাল্লাটা যদি একটু বেশিই ভারী হয় তা হলে কোন বন্ধুকে বিষয়টা জানান। দরকার হলে পরামর্শ নিন মনোবিদের। মনের কথাটা বললে অনেক সময় নিজেকে বেশ হাল্কা লাগে। সমস্যার সমাধান হয়তো নাও হতে পারে। কিন্তু মেজাজটা ভালো হয়ে যাবে। জীবনের ইতিবাচক দিকটা সামনে উঠে আসবে।
- খুব ছোট ছোট জিনিসও অনেক সময় মন ভালো করে দেয়। সেই ছোট ছোট জিনিসগুলোই খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। সেটা হতে পারে বিভিন্ন গেম খেলা, রান্না করা, যাদের বাগান করার শখ তাদের বাগানের পরিচর্যা, হতে পারে আড্ডা দেয়া।
- আপনি ভেবে দেখুন, মন খারাপের মুহূর্তে ঠিক কি করতে আপনার ভালো লাগে। খুব ভালো থাকার সময়ই বা কি করেন? সেগুলোই করুন। মন ভালো থাকবেই।
- জীবনে কম-বেশী দুঃখ সবারই থাকে। নিজের কষ্টটা একটু সরিয়ে রেখে অন্যকে যদি একটু সাহায্য করতে পারেন তা হলে ভালো লাগবে। অবসর সময়ে কোন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে যোগ দিতে পারেন। দুস্থ শিশুদের পড়াতে পারেন; এতে উপকার হবে ওদের, ফল পাবেন আপনিও। বন্ধুরা বিপদে পড়লে তাদের পাশে দাঁড়ান।
- পরিবারটাও হেলাফেলার নয়। কথায় বলে, নিজের ঘর থেকেই শুরু হয় জনসেবা। এ কথাকে কাজে পরিণত করুন। পরিবারের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিন, পরিবারকে বন্ধুর মতো ভাবুন।
- জীবনে কি করতে চান সেটা জানা খুবই জরুরী। সেই মতো তৈরী করুন নিজেকে। যেটা ভালো লাগে সেটাই করুন। জোর করে কিছু করতে যাবেন না। তাতে খারাপ লাগাটা বাঁড়বে। অন্য সকল চিন্তা বাদ দিয়ে আপনার লক্ষ্যের কথা ভাবুন, মন খারাপ হওয়ার সময়ই থাকবে না।
প্রকৃত সুখের জন্য দরকার আত্ম-প্রফুল্লতা। নিজে যদি মন থেকে খুশী না থাকে, উপরে খুশীর ভান করে, তাহলে সে তার প্রকৃত সাথীকেও আনন্দ দিতে পারবে না। অন্যকে খুশী করতে নিজের খুশীর প্রয়োজন বেশী। যদিও আজকাল প্রায় সবাই মানুষের বাইরের খুশী, তার বাইরের চেহারাতেই থাকে, তার সাথেই তাল মিলিয়ে চলে; কিন্তু যারা প্রকৃত সাথী, তারা প্রথমে বাইরের দিকের সাথে তাল মেলালেও তার ভিতরের অখুশীর জন্য তারা তাতে পরিপূর্ণ আনন্দ পায় না, অর্থাৎ অপরকে ভালো রাখতেও আপনার মন ভালো থাকা প্রয়োজন। সর্বোপরি নিজের জন্য, নিজের উন্নতির জন্য, পরিবারের জন্য, বন্ধুর জন্য, পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলার জন্য মন ভালো থাকাটা আবশ্যক।
মহৎ ব্যক্তিত্ব যারা, তাদের জীবনী পড়লে বোঝা যায় তাদের জীবনে দুঃখের কোনো কমতি ছিলো না, কিন্তু তারা তা নিয়ে পড়ে থাকেন নি, দুঃখকে হাসিমুখে বরণ করে এগিয়ে গিয়েছেন নিজের জন্য, দশের জন্য, দেশের জন্য। তাই সকলের উচিত তার জীবনকে উপভোগ করা, দুঃখকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে, তাকে আপনার ইতিবাচক প্রতিদ্বন্দী বন্ধুর ন্যায় মেনে নিয়ে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া। সর্বদা প্রাণবন্ত থাকুন।
0 Comment "মন ভালো রাখার উপায় --"
Post a Comment